ঘুষ : দেয়া-নেয়া দুটিই অপরাধ
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ এএম | আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ এএম
ঘুষ দেয়া-নেয়ার কারণে সমাজ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ও ধ্বংসাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়, সম্পদ জাহান্নামের উপকরণ, ইবাদত,জাকাত,দান-সাদকাও কবুল হয় না। অন্যায়ভাবে আয়-রোজগার করা বৈধ নয় বরং তা হারাম। আল্লাহ তাআলা অবৈধ পন্থায় উপার্জন করতে নিষেধ করেছেন। কেননা ঘুষ বা উৎকোচ গ্রহণ করা সুদ, চুরি-ডাকাতি,জিনা-ব্যভিচারের মতো হারাম ও অবৈধ কাজ। যার চুড়ান্ত পরিণাম জাহান্নামের কঠিন শাস্তি। ঘুষ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য মারাত্মক ব্যাধি। ঘুষের আদান-প্রদান তথা লেনদেন একটি নিকৃষ্ট পন্থা। এ ব্যাধি ও নিকৃষ্ট পন্থা থেকে বিরত থাকা ইসলামের নির্দেশ। ঘুষের কারণে দেশ দিনদিন বিপর্যস্তের নিম্ন স্তরে ধাবিত হচ্ছে। সমাজের মধ্যে ‘ঘুষ’ নামক মরণফাঁদটি আজ প্রকট আকার ধারন করেছে। ফলে সমাজের সর্বত্র হতাশা, ক্ষোভ ও নানা প্রকার অপরাধ দুর্দমনীয় হয়ে উঠছে। ঘুষ আজ সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে যেন একটি অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতি ক্ষুদ্র থেকে শুরু করে অতি বড় প্রত্যেকটি স্তরেই ঘুষের প্রচলন। সাম্প্রতিক সময়ে ঘুষ ছাড়া অধিকাংশ কাজই সমাধান হয় না। যেখানেই যাই সেখানেই ঘুষের ভয়াল রূপ দেখতে পাই। ঘুষের এই বহুমাত্রিক ছড়াছড়িতে নিরীহ জনসাধারণ আজ অসহায়। কোথাও নেই নূন্যতম নৈতিক মূল্যবোধ। ফলে দিন দিন মানুষ পশুর মতো আচরণ করতেও দ্বিদাবোধ করছে না। ঘুষের এই অবাধ আদান-প্রদানের ফলে সমাজের যাবতীয় কল্যাণমুখীতা যেমন ধ্বংস হচ্ছে তেমনি যত্রতত্র রাহাজানি, কালোবাজারিসহ বিভিন্ন খারাপ কাজের প্রভাব ভয়াবহ আকারে বিস্তার লাভ করছে। ঘুষ শুধু গ্রহীতাকে ধ্বংস করে না বরং সমগ্র দেশ ও জাতির উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যেখানে ঘুষের অবাধ বিচরণ সেখানে আইন-শৃঙ্খলা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। অথচ আইনের উপরেই দেশ ও জাতির শান্তি ও নিরাপত্তা নির্ভরশীল। আর যেখানে আইনের শাসন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে সেখানে মানুষের নূন্যতম নিরাপত্তা থাকে না। ঘুষ নেওয়া এবং দেওয়া সমান অপরাধ। নূন্যতম মানবতাবোধ জাগ্রত হলে সেখানে ঘুষের প্রশ্নই উঠে না। কারণ এটি সম্পূর্ণ মানবতা বর্জিত কাজ। যা কখনো ইসলাম সমর্থন করে না। ঘুষ নেওয়া এবং দেওয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হচ্ছে- ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পদের কিছু অংশ জেনে বুঝে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারককে উৎকোচ দিও না’ (সূরা : বাকারাহ-১৮৮)। ঘুষ গ্রহণের কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করে রাসূল (স.) ইরশাদ করেন- ‘নিশ্চয়ই যে অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করবে, কিয়ামতের দিন তার জন্য নির্ধারিত রয়েছে জাহান্নাম’ (বুখারী, মিশকাত-৩৯৯৫)। রাসূল (স.) আরো ইরশাদ করেন, ‘হারাম খাদ্য ভক্ষণ করা শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (মিশকাত-২৭৮৭)। তাই ‘গুনাহ’ আল্লাহ ও বান্দার মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে। বান্দার পাপের মাত্রা যত বৃদ্ধি পায়, সেই দূরত্ব তত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এমনকি একসময় বান্দা ছিটকে পড়ে স্বীয় প্রভুর রহমতের ছায়া থেকে। মারা যায় সে ঈমানহারা হয়ে। তাই গুনাহ ছোট হোক বা বড় হোক। গুনাহকে কখনো ছোট করে দেখতে নেই; ফোঁটা ফোঁটা পানি জমে যেমন সৃষ্টি হয় নদী-সাগর, তেমনি ছোট ছোট পাপরাশি একত্রিত হয়ে একসময় জাহান্নামের ঠিকানা গড়ে উঠবে। হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘তোমরা এমন সব কাজ করো যেগুলো তোমাদের দৃষ্টিতে চুলের চেয়েও অধিক হালকা-পাতলা; কিন্তু আমরা রাসূলুল্লাহ সা:-এর যুগে সেগুলোকে ধ্বংসাত্মক মনে করতাম।’ (সহিহ বুখারি : ৬৪৯২) মানুষ যেন নিজের পাপের প্রতি উদাসীন না হয়ে যায় সে জন্য রাসুলুল্লাহ সা: সতর্ক করে বলেন, ‘একজন ঈমানদার ব্যক্তির কাছে তার পাপ হলো একটি পাহাড়ের মতো, যার নিচে সে বসে আছে এবং সে আশঙ্কা করে যে, সেটি তার উপর পতিত হতে পারে। অন্য দিকে একজন দৃষ্ট মানুষ তার পাপকে উড়ন্ত মাছির মতো মনে করে এবং সেটিকে অবজ্ঞা করে।’ (সহিহ বুখারি : ৬৩০৮) গুনাহের ব্যাপারে সতর্ক করে রাসুলুল্লাহ সা: আরো ইরশাদ করেন, গুনাহ দু’ধরনের। ১. সগিরা গুনাহ (ছোট পাপ) ২. কবিরা গুনাহ (বড় পাপ) সগিরা গুনাহ বান্দার নেক আমল দ্বারা মাফ হয়ে যায়। আর কবিরা গুনাহ তাওবা ব্যতীত মাফ হয় না। বান্দা জাহান্নামে যাওয়ার জন্য তার একটি কবিরা গুনাহই যথেষ্ট। একটি কবিরা গুনাহ নিয়ে মারা গেলে তাকে অবশ্যই জাহান্নামে জ্বলতে হবে। ভুগতে হবে পরকালের কঠিন শাস্তি। মানুষমাত্রই গুনাহ হতে পারে। তাই বলে গুনাহ নিয়ে বসে থাকা যাবে না; বরং গুনাহ হওয়ার সাথে সাথেই তাওবাহ করে নিতে হবে। ঘুষ জাতীয় নিষিদ্ধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ার ফলে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ এবং দেশের সর্বত্র বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সর্বত্র বিরাজ করছে অশান্তি। ঘুষ নামক এই বিষফোঁড়াটি মানুষের নৈতিকতার দিকটাকে সমূলে উৎপাটিত করে দেয়। যা গোটা সমাজ ব্যবস্থাকে কলুষিত করে তুলে। ঘুষ নামক এই ভয়াবহ সংক্রামক ব্যধি থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সর্বত্র জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। ঘুষ মুক্ত সমাজ গঠনের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। তাই মুমিন মুসলমানের উচিত, ঘুষ থেকে নিজেকে বিরত রাখা। ঘুষের কাজে অন্যকে সহযোগিতা না করা। ঘুষের কাজে কারো পক্ষে দালালি না করা। এই মারাত্মক ব্যাধি ও ক্ষত থেকে বেচে থাকাই ঈমানের অনিবার্য দাবি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঘুষের কুফল ও খারাপ প্রচলন থেকে নিজেদের হেফাজত করাসহ হালালের ওপর অটল ও অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ